মাঝে মাঝে ভাবি সাংবাদিকরা কত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন? অনিশ্চয়তার একটি পেশা সাংবাদিকতা। এটি এমন একটি পেশা যাদের শত্রু তৈরি হয় পাইকারি হারে। কারও পক্ষে ১০টি রিপোর্ট করার পর একটি রিপোর্টে হয়ত কোনো সমালোচনা বা নেতিবাচক কিছু এসেছে। এতেই ওই ব্যক্তি ক্ষেপে গেলেন সাংবাদিকের ওপর। সেই ব্যক্তিটি যদি হন সমাজের প্রতিষ্ঠিত কেউ কিংবা ক্ষমতাধর তাহলে তো ওই সাংবাদিকের জীবনের হুমকিও রয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতি বছর অসংখ্য সংবাদকর্মী প্রাণ হারান। যেখানেই সংঘাত-সংঘর্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যায়-অবিচার, অসততা-দুর্নীতি সেখানেই ছুটে যান সাংবাদিকরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলে আনেন সত্যটা। প্রকৃত তথ্য দিতে, আরও বেশি খবরে সমৃদ্ধ করতে নিরলস শ্রম দিয়ে যান প্রতিটি সংবাদকর্মী।
সরকারি দলের কাছে (যে দলই ক্ষমতায় থাকুক) সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কখনোই সমাদৃত নয়। কারণ তাদের সরকারের ভালো ভালো ৯০টি দিক না দেখে ১০টি খারাপ দিকই জাতির সামনে তুলে ধরেন। এজন্য সব সরকারের আমলেই সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সরকার এবং সরকারি দলের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। আবার বিরোধী দলও সাংবাদিকদের পছন্দ করে না; ভাবে সাংবাদিকরা সরকারের দালাল। আমাদের প্রচারটা সেভাবে দিচ্ছে না। এভাবে সমাজের বেশির ভাগ শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সাংবাদিকরা নিন্দার পাত্র। সাংবাদিকরা যে একদম ধোয়া তুলসি পাতা সেটা বলছি না। তবে তাদের প্রতি যে হারে সবার ক্ষোভ ও নিন্দা বর্ষিত হয় তা দেখে মাঝে মাঝে ভাবি সত্যিই কি তারা এতোটা অপরাধী!
তবে মজার ব্যাপার হলো, সাংবাদিকরা যতই নিন্দার পাত্র হোক মোটামুটি সবাই কোনো না কোনোভাবে সাংবাদিকদের কাছে ‘ধরা’ খাওয়া। পদোন্নতির জন্য ভালো কাজের প্রচার লাগবে, পুলিশ অফিসার বা সরকারি আমলারা দ্বারস্থ হন সেই সাংবাদিকের। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে চান, সাংবাদিকদের সাপোর্ট লাগবেই। কোনো ভালো কাজের প্রচার কিংবা সমাজের কোনো অনাচারের বিরোধিতা করতে চান আশ্রয় এই সাংবাদিকেরাই। মিডিয়া ছাড়া সরকার যেন অচল। অসদাচরণের কারণে একটি মাত্র সংস্থা বা বিভাগের খবর বয়কটের হুমকি দিলে সংশ্লিষ্টদের গলার পানি শুকিয়ে যায়। আর বিরোধী দল, তাদের মূল পুঁজিই মিডিয়া।